বাংলাদেশে বিবাহিতদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ পুরুষ তাদের স্ত্রীর দ্বারা ‘মানসিক’ নির্যাতনের শিকার। কিন্তু সামাজিক লজ্জার ভয়ে তারা সেটা প্রকাশ করতে পারেন না। নিজেদের পরিচালিত এক গবেষণার ভিত্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন।
ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবাধিকার কর্মীরাও বিবাহিত অনেক পুরুষের নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়ে একমত।
তারা বলছেন, পুরুষদের নির্যাতিত হওয়ার খবর তাদের কাছে আসে।
সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিছু বেসরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস পালন করছে।
বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন প্রতিবছর ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশে পুরুষ দিবস পালন করছে।
ছোট পরিসরে এবারও এমন আয়োজন করা হবে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শেখ খাইরুল আলম সংবাদমাধ্যমকে জানান, নির্যাতিত পুরুষদের পরামর্শ ও আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতা দিতে এই সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রতিদিন যে ফোন আসছে তাতে আমরা দেখেছি, নীরবে চোখের জল ফেলছেন অনেক পুরুষ। লজ্জায় তারা নির্যাতনের কথা বলতে পারছেন না। কোন নারী নির্যাতিত হলে তিনি তো বিচার চাইতে পারেন। অনেক সংগঠন তার পাশে দাঁড়ায়। নির্যাতিত পুরুষদের সহযোগিতার জন্য আমরা এ সংগঠনটি করেছি।
নিজেও এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন আলম; বলেন, নির্যাতনের শিকার হয়ে আমি অনেক মানবাধিকার সংগঠনের কাছে গিয়েছি। তারা কেউই নির্যাতিত পুরুষদের পাশে দাঁড়াতে রাজি হয়নি। অনেকটা বাধ্য হয়েই আমরা এই সংগঠন করেছি। এখন আমরা নির্যাতনের শিকার পুরুষকে আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতা করছি; তাদের পরামর্শ দিচ্ছি।
‘জাতীয় সংসদে পুরুষ নির্যাতন বিরোধী আইন করার জন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছি। এই আইনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রচারণাও চালাচ্ছি।’ যোগ করেন তিনি।
সংগঠনটির গবেষণার বিষয়ে তিনি জানান, আমাদের কাছে প্রতিদিন যে অভিযোগ আসে তার ভিত্তিতেই আমরা গবেষণাটি করেছি। তবে সমস্যা হলো, কেউই লিখিত অভিযোগ করতে চান না; ফলে আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোন দলিলাদি নেই।
সাম্প্রতিক সময়ের উদাহরণ দিয়ে আলম বলেন, গত শুক্রবার ঢাকার মিরপুর থেকে একজন ফোন করে নির্যাতনের অভিযোগ করছেন৷ তিনি ফোন করে কাঁদছিলেন। লজ্জায় নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি। অধিকাংশ পুরুষের ক্ষেত্রেই একই চিত্র, নীরবে চোখের জল ফেলছে, প্রতিকার চাইতে পারছে না।
সংগঠনটির দাবি বিদেশ থেকে ফোন করেও অনেকে তাদের কাছে নির্যাতনের অভিযোগ করছে।
পুরুষ নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে একমত আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী শিপা হাফিজা।
তিনি বলেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকার সময় দেখেছি; অনেক পুরুষ নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ নিয়ে এসেছেন।
‘আমার ঘনিষ্ঠ ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তাও এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার স্ত্রীর অভিযোগের পর গণমাধ্যমে সেটি ফলাওভাবে প্রচারিত হয়েছে। যদিও পরে আদালতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন; ততদিনে কিন্তু তার সমাজিক যে ক্ষতি হওয়ার সেটা হয়ে গেছে।