লালমনিরহাটের পাটগ্রামে কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা যুবকের নাম শহিদুন্নবী জুয়েল। আর তার সঙ্গে থাকা অপরজনের নাম সুলতান জোবায়ের। তাদের উভয়ের বাড়িই রংপুরে।
শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম তাদের পরিচয় জানান।
জানা গেছে, নিহতের পুরো নাম আবু ইউনুস মোহাম্মদ শহীদুন্নবী জুয়েল। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। তার বয়স ছিলো পঞ্চাশের কিছু বেশি।
জুয়েলের জন্ম রংপুরে শালবনে। সেখানেই বড় হয়েছেন। রংপুর জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সে। ঢাবি থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করে রংপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের লাইব্রেরি সায়েন্সের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে মূলত লাইব্রেরির ইনচার্জ হিসেবে কাজ করতেন। টানা ২৪ বছর সেখানে চাকরি করেছেন তিনি। বছরখানেক আগে বাধ্যতামূলকভাবে রিজাইন করানো হয়।
এরপর গত বছর জুয়েল নিজের ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সেটাও তাতেও ব্যর্থ হন।
চাকরী না থাকাসহ নানা কারণে জুয়েল গত কয়েকদিন ধরে মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন বলে জানিয়েছে পরিবার। তবে বদ্ধউন্মাদ ছিলেন না।
তিনি ব্যক্তিগত জীবনে ধার্মিক ও ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন বলে জানিয়েছেন পরিবার ও প্রতিবেশীরা।
গণপিটুনির ভিডিও দেখে ভাইকে শনাক্ত
নিহত শহীদুন্নবী জুয়েলের ভাই তৌহিদুন্নবী জানান, ঘটনার দিন (বৃহস্পতিবার) সকালে তার ভাই মোটরসাইকেলে করে স্কুলের এক বন্ধুর বাড়িতে যান। সেখান থেকে তারা বেরিয়ে গেলেও কখন কী উদ্দেশ্যে পাটগ্রামে গিয়েছিলেন সেটা তারা জানতে পারেননি।
সন্ধ্যার পরেও বাড়িতে না ফেরায় এবং মোবাইল ফোনে পাওয়া না যাওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়।
এ ওই বন্ধুর কাছে খবর নেয়া হলে তিনি পাটগ্রামের সেই সহিংস পরিস্থিতির কথা জানান।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গণপিটুনির ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে পড়লে সেটি দেখে নিজের ভাইকে চিনতে পারেন তৌহিদুন্নবী।
পুলিশ জানিয়েছে, সুলতান জোবায়ের আব্বাস নামে একজন দলিল লেখককে নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে করে বৃহস্পতিবার জুয়েল পাটগ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন।
সেখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ভারতীয় সীমান্ত এলাকার বুড়িমারী স্থলবন্দর লাগোয়া বাজারে ওই মসজিদটির অবস্থান।
এদিকে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে লালমনিরহাটের পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পাটগ্রাম থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
‘এসব মামলায় শত শত মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে নাম উল্লেখ করে আসামি যেমন আছে তেমনি অজ্ঞাতনামা আসামিও আছে।’
ভিডিও ফুটেজ দেখে দেখে আসামিদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। এরিমধ্যে বহু মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার সিআইডির সিনিয়র এএসপি আতাউর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। গুজবের উৎস, অর্থাৎ প্রথম কে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।