কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামে বিভিন্ন কর্মসুচীর মধ্য দিয়ে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়ায় রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের মূল ফটকের কাছে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়, জেলা প্রশাসন, কলেজ প্রশাসন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জেলা আইনজীবী সমিতি, উত্তরবঙ্গ জাদুঘরসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা। পরে সেখানে কবির আত্মার শান্তি কামনায় নিরবতা পালন ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বক্তব্য রাখেন, জেলা প্রশাসক মোঃ রেজাউল করিম, আইন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, কুড়িগ্রাম সরকারি মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দিন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক শ্যামল ভৌমিক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সাধারণ সম্পাদক দুলাল বোস, প্রচ্ছদ কুড়িগ্রামের সহ-সভাপতি ইমতে আহসান শিলু, এ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার রায় প্রমুখ। বক্তারা কবির বর্নাঢ্য জীবন নিয়ে স্মৃতি চারণ করে বলেন, কবির নাটক, সঙ্গীত, উপন্যাস ও গল্প বাংলা সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধ। তবে মৃত্যুর চার বছর পেরিয়ে গেলেও কবির সমাধী সৌধ নির্মিত না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন বক্তারা।
দেশ বরেন্য এ লেখক ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার ইচ্ছানুযায়ী জন্মশহর কুড়িগ্রামের সরকারি কলেজ চত্বরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। কবির সমাধীকে ঘিরে স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মান করে তার সকল সাহিত্য কর্ম সংরক্ষন করার দাবী এ জেলার মানুষের।
১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরের থানা পাড়ায় পৈত্রিক নিবাসে জন্ম গ্রহন করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। হোমিও চিকিৎসক সৈয়দ সিদ্দিক হোসেন ও নুর জাহানের ৫ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন জেষ্ঠ্য। ধরলা নদীর পাড়ে শৈশব কাটানো এ কবি শহরের রিভার ভিউ হাই স্কুলে নবম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখার পর পাড়ি জমান ঢাকায়।
সেখানে লেখাপড়ার পাশাপাশি মনযোগী হন লেখালেখিতে। একে একে তার পদচারনা হতে থাকে গল্প, কবিতা, গান ও নাটকসহ সাহিত্যের সকল অঙ্গনে। তার লেখায় ফুটে ওঠে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনসহ সাধারন মানুষের কথা। কবিতা, উপন্যাস, নাটক,ছোটগল্প তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন সব্যসাচী।
১৯৬৪ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান সৈয়দ শামসুল হক। ১৯৫০-এর দশকে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস দেয়ালের দেশ। পরে খেলারাম খেলে যা, নিষিদ্ধ লোবান, সীমানা ছাড়িয়ে, নীল দংশন,বারো দিনের জীবন, তুমি সেই তরবারী, কয়েকটি মানুষের সোনালী যৌবন, নির্বাসিতার মতো বিখ্যাত উপন্যাস উপহার দিয়েছেন।
তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে একদা এক রাজ্যে, বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা,পরানের গহীন ভিতর, অপর পুরুষ, অগ্নি ও জলের কবিতা। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, নুরুলদীনের সারা জীবন, সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কাব্যনাট্য।
চন্দন কুমার সরকার