তিনি যা করেন তাই ভাইরাল হয়! ফেসবুক লাইভে এসে ‘গর্জন’ এবং ‘হুঙ্কার’ দেন। বিভিন্ন বিষয়ে নিজস্ব ভঙ্গিতে কথা বলেন; যা বলেন তাই ভাইরাল!
বলা হচ্ছে এনামুল হকের কথা। নিজের ফেসবুক পেজ তিনি নাম লিখেছেন এইচ এম এনামুল হক।
তাই এই ভাইরাল হওয়া শুরুর গল্পটি একটু আলাদা।
একদিন ফেসবুকে তিনি মন্তব্য করেন, ‘আয়মান সাদিকের ফাঁসি চাই।’ সেখানে একজন জিজ্ঞাসা করেন, কেন ফাঁসি চান? উত্তরে তিনি বলেন, সবাই লিখতেছে, তাই আমিও লিখেছি। তাই কথোপকথনের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়। এটা ভাইরাল হওয়ার কারণে এনামুলের স্ত্রী তাকে ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যান।
স্ত্রী চলে যাবার পর লাইভে এসে কান্নাকাটি করতে থাকেন এনামুল। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ট্রোলের শিকার হন।
এমন ঘটনা সাধারণ কিছুদিন পর মানুষের অন্তরালে চলে যায়। কিন্তু এনামুলের ক্ষেত্রে হলো উল্টোটা।
কয়েকদিন পর লাইভে এসে তিনি জানালে, তার স্ত্রী কিছু দিনের জন্য চলে গিয়েছিলেন। ফিরে এসেছেন। একই সাথে প্রশ্নও করেন, কেন আপনারা এরকম সব জিনিস ভাইরাল করে দেন?
মজার বিষয় হলো, তার সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।
বিষয়টা এমন যে, এনামুল যাই করেন তাই ভাইরাল! আর তাই তো আলোচিত ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদি, তাহসিনেশ এনামুলকে তাদের সঙ্গে লাইভে আমন্ত্রণ জানান।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন এনামুল বেশ পরিচিত। তার ফ্যান ফলোয়ার্স অনেক।
তিনি লাইভে আসলেই ফলোয়ার্সরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন তার কথা শোনার জন্য।
হুংকার ও গর্জন দেন এনামুল
তার লাইভে অনেক উল্টোপাল্টা মন্তব্য করে নেটিজেনরা। আর সেসবের জবাব দেন এনামুল। তার এই জবাবগুলোই মূলত বিনোদন জোগায় তার ফলোয়ার্সদের। এনামুলের কথায় এগুলো তার ‘হুংকার’ ও ‘গর্জন’। নিজের কোটি কোটি ‘সৈনিক’ ‘সৈনিকা’ রয়েছে বলেও লাইভে বলেন এনামুল। এসবের মানে কী? জানতে চাইলে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, আপনার সঙ্গে সামনাসামনি এনামুল ও সোশ্যাল মিডিয়ার এনামুল দুটো কিন্তু ভিন্ন জিনিস। লাইভে এনামুল যেসব কথা বলে সেসবই একেকটা হুংকার। এই হুংকারকে সকলে ভয় পায় খারাপ কাজ হতে বিরত থাকে। এনামুল সিংহের অনেক ঊর্ধ্বে চলে গেছে, যার কারণে এনামুলের গর্জন ও হুংকার দুটো খুবই কাজদায়ক। এ বিষয়ে আরো জানতে চাইলে আমার লাইভে আসবেন। আমার সৈনিক সংখ্যা কোটি কোটি, সৈনিকাও রয়েছে অনেকে। আমাকে অনুসরণকারীরাই হলো আমার সৈনিক, সৈনিকা।
‘সিংহের হুংকার’র সঙ্গে মিল রেখে ফেসবুকে তিনি লেখেন ‘এনামংহের হুংকার’।
যে আয়মান সাদিকের স্ক্রিনশট দিয়ে আমি ভাইরাল হয়েছি। তার সঙ্গেও এখন আমার ভালো সম্পর্ক। তিনিও আমার সৈনিক।
স্ত্রী সাবরিনাকে নিয়ে সাভারে থাকেন এনামুল হক। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের হায়ালুঘাটে।
তিনি বলেন, আমি একজন শিক্ষক। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াই। বিয়ে করেছি এক বছর হলো। আমার স্ত্রীকে আমি খুবই ভালোবাসি। একটা মন্তব্য আমার এমনভাবেই ভাইরাল হয়ে যাবে ভাবিনি। সাময়িকভাবে আমার স্ত্রী আমাকে ছড়ে চলে গিয়েছিল, পরে ফিরে এসেছে।
স্ত্রী ফিরে আসার পর এনামুল ফেসবুকে লিখেছেন, এইদিনেই কোটি ভক্তের বুকে আঘাত দিয়ে তোমার দু’হাত ধরেছিলাম।
এনামুল যাই করেন তাই ভাইরাল, কেন ?
এনামুলের ভাইরাল হওয়ার রহস্য কী। তার কথা কেন মানুষ শোনে?
এনামুলের কথায়, দেখেন, আমি যখন দেখলাম মানুষ আমার কথা শুনছে তখন আমি ভাবলাম, এটাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। অনেকেই মনে করেন আমি অশ্লীল কমেন্ট বেছে বেছে পড়ি, আদতে বিষয়টি এমন যে আমি সেইসব কমেন্ট প্রদানকারীকে কৌশলে সুপরামর্শ দেই। এটা একটা ইতিবাচক বিষয়। আমার স্ত্রী লাইভের বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করতো, এখন সে কিছু বলে না। এখন আমি সুযোগ পেলেই হুংকার দেই।
আরো পড়ুন: ‘বড় হুজুর’কে হারালো কওমি সমাজ
এনামুলের বাবা মা গ্রামের বাড়ি থাকেন। তারাও এখন ছেলের ভাইরাল হওয়ার বিষয়টা জানে।
এনামুল বলেন, বাবা-মা তো জানতো না। কিন্তু এলাকার ছেলেরা দেখিয়েছে আমার মা-বাবাকে। আমার মা ফোন করে বলে বাবা এনামুল এসব কী করিস, এসব ছেড়ে দে… তারা তো গ্রামে থাকে, এসব তো বুঝবে না। তাই আমি কিছু বলি না। আমাকে কয়েকবার বলার পরে এখন আর বলে না কিছু। আসলে কিছু বলার তো নাই।
এনামুলের সোশ্যাল মিডিয়ায় বাজে মন্তব্য করার সংস্কৃতি তার ‘হুংকারের’ মাধ্যমে ধীরে ধীরে দূর করে দিতে চান। বলেন, যে আয়মান সাদিকের স্ক্রিনশট দিয়ে আমি ভাইরাল হয়েছি। তার সঙ্গেও এখন আমার ভালো সম্পর্ক। তিনিও আমার সৈনিক।