কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের গাড়িতে কোনও মাদকদ্রব্য ছিল না। হত্যাকাণ্ডের পর বিষয়টি ভিন্ন দিকে নিতে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার ও বাহারছড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলি সিনহার গাড়িতে মাদক রাখেন।
আর এসব মাদক থানা থেকে আনান ওসি প্রদীপ।
একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে এমন তথ্য পেয়েছে। তারা বলছে, গাড়িতে মাদক দিয়ে সিনহা হত্যার বিষয়টি ভিন্ন দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেন টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার ও বাহারছড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলি।
এছাড়া মেজর সিনহার গাড়িতে থাকা সিফাতকে গ্রেপ্তারের পর আরেক সহযোগী শিপ্রাকে ধরতে নীলিমা রিসোর্টে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় দুই বোতল ভদকা, তিন বোতল ভ্যাট-৬৯, এক পুরিয়া গাঁজা ও পানির বোতলে এক লিটার দেশীয় মদ উদ্ধার দেখিয়ে মামলা করে পুলিশ। এখানেও মাদক উদ্ধারের বিষয়টি সাজান প্রদীপ ও লিয়াকত।
গোয়েন্দা সংস্থাটির তদন্ত আরও উঠে এসেছে, ঘটনার দিন রাতে এপিবিএনের চেকপোস্টে যখন সিনহাকে থামানো হয়, তার আগে থেকেই চেকপোস্টের কাছে সাদা পোশাকে উপস্থিত ছিলেন বাহারছড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলি ও এসআই নন্দলাল রক্ষিত।
এপিবিএনের একজন সদস্য চেকপোস্টে মেজর সিনহার সিলভার রঙের প্রাইভেট কারটি থামার সংকেত দেন। কারটি একটু এগিয়ে গিয়ে থামে। কাছে যান এপিবিএনের ওই সদস্য।
পরিচয় জানতে চাইলে সিনহা নিজেকে সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর পরিচয় দেন। এসময় তিনি মেজর সিনহাকে চলে যেতে বলেন। হঠাৎই পরিদর্শক লিয়াকত দৌঁড়ে এসে গাড়ির চালকের আসনে থাকা ব্যক্তির পরিচয় জানতে চান।
‘ইংরেজিতে’ নিজেকে সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা পরিচয় দেন মেজর সিনহা। এরপরপরই প্রাইভেটকার থেকে প্রথমে নামানো হয় সিনহার ভিডিও ধারণের সহযোগী সিফাতকে।
সঙ্গে সঙ্গে তাকে থাপ্পড় দেওয়া হয় এবং জাপটে ধরে মাটিতে ফেলা দেওয়া হয়। এই ঘটনা দেখে সিনহা চালকের আসন থেকে দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন।
এ সময় সিনহাকে ‘হাত উঁচু’ করতে বলেই দূর থেকে পরপর দুটি গুলি করেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত। সিনহার লাইসেন্স করা পিস্তল তখন গাড়িতেই ছিল। এরপর কাছে এসে আরও দুটি গুলি করেন পরিদর্শক লিয়াকত। এরপর সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কেই লুটিয়ে পড়েন মেজর সিনহা।
পরে ঘটনাস্থলে এসে ওসি প্রদীপ অট্টহাসি দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকা সিনহার বুকে পা দিয়ে আঘাত করেন। এহতেও ক্ষান্ত হননি প্রদীপ। এরপর পা দিয়ে গলা চেপে ধরে।