যে বয়সে লেখাপড়া, দুরন্তপনা আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটানোর কথা সেই বয়সে আর্থিক দুর্দশায় নিমজ্জিত পরিবারের হাল ধরেছেন কিশোর রাশেদ।
১৭ বছরের এই কিশোর সব সুখ আল্হাদ ত্যাগ করে জীবীকার সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছেন সৌদি আরব।
সেখানে কষ্টেসৃষ্টে আয় করা টাকা বাড়িতে পাঠান। তবে নিজে চলেন রতি রতি হিসেব করে।
রাশেদের এই ত্যাগের গল্প মানুষের মুখে মুখে। ইতোমধ্যে তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে; যা নিয়ে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৬ রাশেদের সাক্ষাৎকারের ভিডিওটি প্রকাশ হওয়ার পর তা ভাইরাল হয়ে পড়ে। হাজার হাজার মানুষ এটি শেয়ার করছেন এবং কমেন্টে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। সবাই প্রশংসার জোয়ারে ভাসাচ্ছেন রাশেদকে।
প্রবাসী এই কিশোর চার মিনিটের ভিডিওতে জানান, প্রতি মাসে এক হাজার ৫০০ থেকে ৬০০ রিয়াল আয় করেন তিনি; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৬ হাজার টাকার কিছু বেশি।
আয়ের সিংহভাগ টাকা দেশে পাঠান রাশেদ। প্রতিমাসে বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা দেশে পাঠান। সদা হাস্যোজ্জ্বল এই ছেলে কখনই দেশে ২৪ হাজার টাকার নিচে পাঠান না।
সাক্ষাৎগ্রহণকারী প্রথম প্রশ্নেই ধাক্কা খান নেটিজেনরা। রাশেদের হাত খরচের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, প্রতি মাসে তার হাত খরচ ২০ থেকে ৩০ রিয়াল।
এ টাকা মোবাইলের কার্ড কিনতেই চলে যায়? এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদ বলেন, আমি মোবাইল কার্ড ব্যবহার করি না। ওয়াফাই দিয়ে আমার চলে।
পরের প্রশ্নের জবাব নেটিজেনদের আবেগাপ্লুত করেছে।
রাশেদ জানান, ডাল, আলু ভাজি ও ভর্তা খেয়ে দিন পার করন তিনি। টাকা বেশি খরচ হবে বলে মাছ-মাংস খান না।
তিনি বলেন, সৌদিতে আসার প্রথম দিকে মাছ-মাংস খেতেন। কিন্তু পরিবারের আর্থিক সংকটের কথা বিবেচনা করে মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।
ভিডিও গ্রহণের দিন রাশেদ বেগুন ও আলু খেয়েছেন বলেও জানান।
দেশে সবচেয়ে বেশি কাকে মিস করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদের স্পষ্ট জবাব, মাকে সবচেয়ে মিস করি।
এরপর সাক্ষাতগ্রহণকারী বলেন, এতো অল্প বয়সে মা-বাবার কর্তব্য পালন করতে যে কষ্ট তুমি করছ তা দেখে বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারের সন্তানদের শেখা উচিত।
তিনি বলেন, তোমার মতো বয়সের ছেলেরা দোকানে আড্ডা মারে, সড়কে আড্ডা মারে। কিন্তু ১৭ বছর বয়সে পরিবারের জন্য তুমি বিদেশে এসেছো যা সত্যিই অকল্পনীয়।
টাকা দেয়ার ব্যাপারে ভিডিও-তে হাসিমুখে রাশেদ বলেন, ভাই ছোট, লেখাপড়া করে। বোনকে বিয়ে দিতে হবে। এই মাসে বাড়তি টাকা পাঠাতে হবে। আর টাকা মায়ের কাছে পাঠাই। পরিবারসহ মায়ের জন্য কষ্ট করছি।
সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী যখন বলেন, তোমার মা তোমাকে নিয়ে গর্ব করবে। তুমি গর্ব করার মতো একটা ছেলে।
তখন রাশেদ বলেন, মা গর্ব করবে। হাশরে কষ্টের কথা বলবে, হিসাব যখন দিবে আমি জান্নাত পাবো, সমস্যা কি! মা আমাকে ১০ মাস ১০ দিন কষ্ট করে জন্ম দিয়েছে। আমি মায়ের কষ্ট না বুঝলে কে বুঝবে?
তিনি বলেন, মায়ের মৃত্যু হলে তো সব টাকা আমার কাছেই তো থাকবে। মায়ের জন্য সবকিছু করছি। সব টাকা মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেই। এখন আমার পকেট খুঁজলে এক টাকাও পাবেন না।
কথাগুলো বলতে বলতে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি নিস্পাপ চেহারার এই প্রবাসী কিশোর। হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে আবার নির্লিপ্ত হয়ে কথা বলা শুরু করেন।
রাশেদের গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের কোথায় সেটা অবশ্য এখনো জানা যায়নি।