কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
পূর্ব পরিচয়, তারপর প্রেম। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ। পরে বিয়েতে অস্বীকৃতি জানালে ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন মেয়ের বাবা। তিন মাস পর উভয় পক্ষের সমঝোতায় রাজারহাট উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সেই ধর্ষকের সাথে বিয়ে হলো নিপীড়নের শিকার তরুণীর।
শুক্রবার (২১ আগস্ট) রাতে রাজারহাট উপজেলার ফতেখাঁ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাজু সরকার ও বিয়ে নিবন্ধক (কাজি) সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে উপজেলার ফতেখাঁ গ্রামের মাদরাসা ছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের কর্পূরা গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের পুত্র অভিযুক্ত সেফারুল ইসলাম (২৫) এর সাথে নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বিয়ে হয়।
স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধিসহ উভয় পরিবারের লোকদের উপস্থিতিতে ১০ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে হলেও নগদ ১ হাজার ৫শ টাকা ছাড়া দেনমোহরের পুরো টাকাই বাকি রাখা হয়। ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত যুবকের সাথে নির্যাতনের শিকার তরুণীর বিয়ে দেওয়ায় এলাকায় নানা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপ সৃষ্টি করে মামলা থেকে বাঁচতে ছেলে পক্ষ স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সহায়তায় মেয়ে পক্ষকে বিয়েতে রাজি হতে বাধ্য করেছে বলে জানান স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে জানতে নির্যাতিতার বাবার ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের বিবাহ নিবন্ধক (কাজি) সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, শুক্রবার রাতে উভয় পক্ষের অভিভাবকের উপস্থিতিতে বিবাহ রেজিস্ট্রি করেছি এবং রাতেই মেয়েটিকে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে গেছে।
এসময় রাজারহাট উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল সহরাওয়ার্দী বাপ্পি, ঘড়িয়ালডঙা ইউপি চেয়ারম্যান, উলিপুরের দলদলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত হতে ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ কর্মকারকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। আর রাজারহাট উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল সহরাওয়ার্দী বাপ্পি ও উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান মুন্সির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
রাজারহাট থানার ওসি রাজু সরকার জানান, ধর্ষণ মামলার আসামির সাথে অভিযোগকারী তরুণীর বিয়ের খবর আমি পেয়েছি। তারা উভয় পক্ষ সমঝোতার ভিত্তিতে বিয়ে সম্পন্ন করেছেন বলে জানতে পেরেছি। যেহেতু তাদের মামলাটি এখন আদালতে বিচারাধীন সুতরাং পরবর্তী সিদ্ধান্ত আদালত গ্রহণ করবেন।
প্রসঙ্গত, রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের ফতেখাঁ কারামতিয়া দাখিল মাদরাসার এক দাখিল পরীক্ষার্থীর সাথে পার্শ্ববর্তী উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের কর্পূরা গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের পুত্র সেফারুল ইসলাম (২৫) এর পূর্ব পরিচয় ছিল। সেই সূত্র ধরে সেফারুল বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগে নির্যাতিতার বাবা বাদী হয়ে গত ১৯মে রাজারহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যা তদন্তাধীন রয়েছে।