বিমান দুর্ঘটনার দিনটি ছিল তার জীবনের অন্যতম একটি দিন। সে দিন যে ছিল তার মায়ের জন্মদিন। বলছি ভারতের কোঝিকোড়ের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় নিহত বিমানের পাইলট দীপক সাঠের কথা।
ভেবেছিলেন জন্মদিনে নাগপুরের বাড়িতে গিয়ে চমকে দেবেন মাকে। এক দুর্ঘটনাই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে দিল। বরং ছেলেকে হয়তো শেষ বারের মতো দেখতে পাবেন না দীপক সাঠের বাবা-মা।
বড় ছেলের পর নিজের আরও দুর্ঘটনায় আরও এক ছেলেকে হারালেন আশি পেরনো নীলা সাঠে ও তাঁর স্বামী বসন্ত সাঠে ৷ শনিবারই তাঁর ৮৪ তম জন্মদিন৷
৫৮ বছর বয়সি দীপক সাঠে কোঝিকোড়েই থাকতেন৷ তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা নাগপুরের বাসিন্দা ৷ দীপক সাঠের এক আত্মীয় সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন, শনিবার বিমান পেলে নাগপুরে মায়ের কাছে হঠাৎ চলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর।
মার্চ মাসে শেষবার নিজের বাবা- মায়ের সঙ্গে দেখা করে গিয়েছিলেন দীপক সাঠে৷ কিন্তু তার পর থেকে আর নাগপুরে যাওয়ার সুযোগ পাননি তিনি৷ যদিও ফোনে নিয়মিত মা- বাবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর৷ গত বৃহস্পতিবারও দীপক সাঠের সঙ্গে কথা হয় তাঁর বাবা- মায়ের৷
দীপক সাঠের বাবা বসন্ত সাঠে ভারতীয় সেনার একজন প্রাক্তন কর্নেল ৷ নাগপুরের ভারত নগরে স্বামীর সঙ্গে থাকেন নীলা সাঠে৷ প্রিয় সন্তানের একের পর এক স্মৃতি এখন ভিড় করছে তাঁর মনে ৷ নীলা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর তাঁদের দু’ জনকেই বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করেছিলেন দীপক সাঠে ৷
শোকের মধ্যেও ছেলেকে নিয়ে রীতিমতো গর্বিত নীলা৷ তিনি জানিয়েছেন, পড়াশোনা হোক বা খেলাধুলো, সবেতেই বরাবর প্রথম স্থানটিই দখল করতেন দীপক৷ শুধু তাই নয়, সবসময় অন্যদের সাহায্য করতেন তিনি৷ পুরনো স্মৃতি হাতড়ে নীলা বলেন, ‘ও খুব ভাল টেনিস, স্কোয়াশ খেলতে পারত৷ ঘোড়া চড়ার ক্ষেত্রেও ও দারুণ দক্ষ ছিল৷ আমাদের সন্তান বায়ুসেনার ‘সোর্ড অফ অনার’ পুরস্কার পেয়েছিল৷ কিন্তু তার পরেও কোনওকিছু নিয়েই দম্ভ প্রকাশ করত না ও৷’ নীলা সাঠে আরও দাবি করেছেন, মহারাষ্ট্রের প্রথম বাসিন্দা হিসেবে এয়ার ফোর্সের আটটি পুরস্কারই জিতেছিলেন দীপক৷
নীলা সাঠে আরও জানিয়েছেন, বরাবর পরোপকারী ছিলেন দীপক৷ গুজরাতে বন্যার সময় সেনাকর্মীদের সন্তানদের নিজের কাঁধে বসিয়ে উদ্ধার করেছিলেন তিনি৷ এয়ার ইন্ডিয়ায় যোগ দেওয়ার আগে বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ছিলেন দীপক৷ নীলা সাঠের বড় ছেলে ভারতীয় সেনার লেফটেন্যান্ট বিকাশ সাঠেও পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন৷
দীপক সাঠে তাঁর স্ত্রী এবং শ্যালকের সঙ্গে কোঝিকোড়েই থাকতেন৷ তাঁর দুই ছেলে ধনঞ্জয় ও শান্তনু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা৷ ধনঞ্জয় বেঙ্গালুরু থেকে সড়কপথে কোঝিকোড় পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু শান্তনুর পক্ষে বাবার শেষকৃত্যে যোগ দেওয়া সম্ভব হবে না৷
দীপক সাঠের শেষকৃত্য কোথায় হবে তাও এখনও চূড়ান্ত নয়৷ করোনা সংক্রমণের কারণে সব আত্মীয়, বন্ধুরাও শেষকৃত্যে যোগ দিতে পারবেন না৷ ফলে দীপক সাঠের বাবা- মা শেষবারের মতো সন্তানকে দেখতে পাবেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়৷