রাত ৮:৫১ শনিবার ২০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ১৪ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি

হোম দেশ নাটক সাজিয়ে নিখোঁজ ৩ সন্তানের জননী আটক, প্রেমিকসহ শ্রীঘরে

নাটক সাজিয়ে নিখোঁজ ৩ সন্তানের জননী আটক, প্রেমিকসহ শ্রীঘরে

লিখেছেন sabbri sami
Spread the love

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুরের গৃহবধূ খাদিজা বেগমের নিখোঁজের রহস্য উম্মোচন করেছে পুলিশ। দীর্ঘদিন পরকীয়া প্রেম, হত্যার নাটক সাজিয়ে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়ে অবশেষে পুলিশের কাছে ধরা পড়েন খাদিজা ও তার প্রেমিক। প্রেমিক আনোয়ারের সাথে পালিয়ে যাওয়ার আগে হত্যাকান্ডের নাটক সাজাতেই নিজের চুল, ব্লেড ও কিছু রক্ত বাথরুমে ফেলে যায় তিন সন্তানের জননী খাদিজা বেগম।

খাদিজা বেগম নিখোঁজের পরই তার পরিবার থেকে হত্যার অভিযোগ উঠে স্বামী সোহেল মিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় খাদিজার স্বামী সোহেল, শ্বশুর হুমায়ূন কবির এবং শাশুড়ি হেলেনা বেগমকে আটক করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে একদিন পর তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তিন সন্তানের জননী খাদিজা বেগম ও তার প্রেমিক আনোয়ার হোসেনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের একটি বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।

পারিবারিক সূত্র পুলিশ জানায়, গত ১০বছর আগে আশুগঞ্জ উপজেলার শরীফপুর গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার হুমায়ুন কবিরের ছেলে ব্যবসায়ী সোহেলের সাথে বিয়ে হয় সদর উপজেলার চিলোকুট গ্রামের আবুল কাসেম মিয়ার মেয়ে খাদিজা বেগমের। গত ১০ বছরের দাম্পত্য জীবনে এই দম্পতির তিন সন্তান জন্ম হয়। ব্যবসার কারনে সোহেল মিয়া বিয়ের পর থেকেই তার স্ত্রীকে নিয়ে নরসিংদী জেলার রায়পুর উপজেলা আলগি বাজারের পাশে বাসা নিয়ে বসবাস করতেন।

গত ৭মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকের মাধ্যমে খাদিজার সাথে পরিচয় হয় ফেনী জেলার দাগনভূইয়া উপজেলার ইয়ার নুরুল্লাহপুর গ্রামের আবুল বাসারের ছেলে আনোয়ার হোসেনের।

দীর্ঘ প্রেমের পর গত ২ আগষ্ট ভোরে শরীফপুর গ্রামের শ্বশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় খাদিজা। পালিয়ে যাওয়ার সময় খাদিজা বেগম নিজের চুল কেটে, একটি ব্লেড ও কিছু রক্ত বাথরুমে পাশে রেখে যায়। ভোরে শিশুর কান্নার শব্দ শুনে স্বামী সোহেল স্ত্রীকে অনেক ডাকাডাকি করলেও আর পাওয়া যায়নি। সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টিহয়। পরে এ ঘটনায় খাদিজার স্বামী সোহেল, শ্বশুর হুমায়ুন কবির এবং শ্বাশুড়ি হেলেনা বেগমকে আশুগঞ্জ থানা পুলিশ আটক করে । পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

ঘটনাটির কোনো ক্লো-খুঁজে না পাওয়ায় পুলিশ নানা দিক নিয়ে কাজ শুরু করেন। পুলিশের একাধিক টিম চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি উদঘাটনের জন্য মাঠে কাজ শুরু করেন। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাদেরকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় এনে স্বামী সোহেল ও তিন সন্তানকে খাদিজার সামনে আনা হলে স্বামী ও সন্তানদের অস্বীকার করে খাদিজা। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের পর স্বীকার করেন আসল ঘটনা।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে খাদিজা জানান, প্রায়ই বাবার বাড়ির কথা বলে প্রেমিক আনোয়ারের সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেখা করতো খাদিজা। গত ঈদ-উল ফিতরের পর প্রেমিক আনোয়ারের সাথে হুজুর দিয়ে বিয়েও পড়ান তারা। কিন্তু বিষয়টি স্বামী সোহেল মিয়া জানতেন না। বাথরুমের পাশে চুল, রক্ত ও ব্লেড রাখার বিষয়ে খাদিজা বলেন, ঘটনাটিকে হত্যাকান্ডের রূপ দেয়ার জন্য নিজের মাথার চুল ও কোরবানীর গরুর রক্ত ও ব্লেড রেখে যান তিনি। খাদিজা জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামীর সংসার থেকে চলে গেছেন তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদে প্রেমিক আনোয়ার হোসেন জানান, খাদিজা বিবাহিত ও তার তিন সন্তান রয়েছে বিষয়টি তিনি জানতেন না। খাদিজা তাকে জানিয়েছে সে অবিবাহিত। এজন্যই তাকে ভালোবেসে ফেলেন আনোয়ার। তবে হুজুর দিয়ে বিবাহ হলেও আদালতে গিয়ে বিবাহ করতে চাননি খাদিজা। পুলিশের কাছে আটক হওয়ার পর জানতে পারেন ভোটার আইডি কার্ডে স্বামীর নাম থাকায় সে আদালতে বিবাহ করতে রাজি হননি।

এ ঘটনায় আজ শুক্রবার সকালে খাদিজার স্বামী সোহেল মিয়া বাদী হয়ে কথিত প্রেমিক আনোয়ার হোসেনকে প্রধান আসামী ও স্ত্রী খাদিজাকে দ্বিতীয় আসামী করে আশুগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে সকালেই তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ মাহমুদ জানান, বিষয়টি খুবই চাঞ্চল্যকর ছিল যা সিনেমাকেও হার মানাবে। তিনি বলেন, তাদেরকে উদ্ধার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছ।

You may also like

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More