লেবাননে বোমা হামলায় নিহত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার ভাদেশ্বরা গ্রামের মেহেদী হাসান রনির বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। গতকাল (৪ আগস্ট) রাতে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে রনির মৃত্যুর খবর পেয়ে পিতা- মাতা স্বজনেরা কান্নায় জ্ঞান হারাচ্ছেন। তারা রনির মরদেহ দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনার দাবী জানান।
স্বজনেরা জানান, “গত ২০১৪ সালের ৯ মার্চ পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্যে বিদেশের মাটিতে লেবানন পাড়ি জমায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের ভাদেশ্বরা গ্রামের তাজুল ইসলামের বড়ছেলে মেহেদী হাসান রনি (২৫)। লেবাননের রাজধানী বৈরুতের একটি শপিং মলের সুপার সপের বিক্রয় কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। বিদেশের মাটিতে পা রাখার পর আর দেশে আসেন নি। এ বছর ঈদে দেশে আসার কথা থাকলেও করোনার প্রভাবের কারণে আর দেশে আসা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে বোমা হামলায় নিহত হবার খবর গতকাল রাতে রনির বাড়ীতে আসার পর শুরু হয় শোকের মাতম। কান্নারত রনির ছোটবোন জেসমিন আক্তার হ্যাপি জানান, তার ভাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যরা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
রনির পিতা তাজুল ইসলাম জানান, গতকাল তার সাথে এবং তার মা ইনারা বেগম এর সাথে কথা বলছিলেন। এ সময় বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষনিক ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। এর পর পরিবারের সদস্যরা শঙ্কায় পরেন। পরে পরিচিত এক স্বজনের মাধ্যমে জানতে পারেন যে বোমা হামলায় রনি মারা গেছেন। রাতে এমন খবর পেয়ে স্বজনেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শুরু হয় শোকের মাতম।
কান্না জনিত ভাবে তাজুল ইসলাম জানান, তিনি কৃষিকাজ করেন জমিজমা বিক্রি করে তার একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে রনিকে বিদেশের মাটিতে পাঠিয়েছিলেন। ছেলের মৃত্যুর খবরে তিনি বাকরুদ্ধ। তার ছেলের লাশ রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনার দাবী জানান তিনি।
খবর পেয়ে এলাকাবাসী স্বজনসহ জন প্রতিনিধিরা নিহত রনির বাড়ীতে ভিড় করেন। রনিদের বাড়ীতে উপস্থিত মাছিহাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিনুল হক পাভেল জানান তার লাশ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করবেন। পাশাপাশি ভাদেশ্বরা দক্ষিণ পাড়া মানবিক সংগঠনের পক্ষ ১০ হাজার টাকা সহযোগিতার ঘোষণা দেন।
ঘটনার খবর পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঙ্কজ বড়ুয়া ভাদেশ্বরা গ্রামের প্রবাসী রনির বাড়ী পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দেন। পাশাপাশি তাৎক্ষনিক ২০ হাজার টাকা সহায়তার ঘোষণা দেন। এছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবে লাশ দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনার জন্যে জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলাখান ও স্থানীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সাথে কথা বলবেন। তাজুল ইসলামের পরিবারে ৪ সন্তানদের মধ্যে ৩ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে রনি সবার বড় ছিলেন।