নেত্রকোনার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম ‘চোরের ভিটা’ হওয়ায় বিপাকে সচেতন মহল। গ্রামের নামকরণে স্কুলের এমন নামের বিষয়টি নিয়ে সকলের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নেত্রকোনা পূর্বধলা উপজেলা চোরের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
স্কুলটি ২০১৩ সালে সরকারিকরণ করা হয়। তবে একটি স্কুলের নাম চোরের ভিটা হওয়ায় এ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। চোরের ভিটা গ্রাম হওয়াতে অনেকেই অফিস আদালতে এমনকি আত্মীয়তা পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করেন। এ অবস্থা থেকে এলাকাবাসী মুক্তি চান।
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) তিনি বলেন, চোরের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নাম পরিবর্তন করা অতি জরুরি। কারণ কোনো জায়গা শিক্ষক হিসাবে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে। এই অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি চাই।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওবায়দুল্লাহ বলেন, তখনকার সময় বিদ্যালয়টি গ্রামের নামেই নামকরণ করা হয়। যদি কোনো ব্যক্তি উদ্যোগ নিত তাহলে এই সমস্যাটা হত না। ব্যক্তির নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নামকরণ করতে হলে ৬ থেকে ৯ লাখ টাকা লাগবে।
যে কারণে আজ সোমবার (০৩ আগস্ট) দুপুরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নতুন নামের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
এমন একটি নাম থেকে কোমলমতি শিশুদেরকে রেহাই দিতে ‘আলোর ভুবন’ নাম দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম। স্কুলটি নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নের চোরের ভিটা গ্রামে অবস্থিত। ১৯৯১ সনে এলাকায় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে এটি প্রতিষ্ঠিত করেন এলাকার কয়েকজন শিক্ষানুরাগী। দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয়ের নাম নিয়ে সচেতন মহলে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হলে অবশেষে প্রশাসন কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েছে।
নতুন নাম প্রস্তাবের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মঈন উল ইসলাম জানান, গ্রামের নামেই সাধারণত বেশিরভাগ সরকারি স্কুলগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে কারণেই হয়তো এটিও হয়ে গেছে। গ্রামের এমন নাম কেনই বা রাখা হলো এটি আসলে বোধগম্য নয়। তবে একটি স্কুলের এমন নামের কারণে শিশুদের মানসিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। আর সে জন্যই একটি আলোকিত নাম দিয়েছি। যাতে আলোকিত মানুষ গড়ে ওঠে ওই গ্রামটি থেকে। তবে গ্রামের নামটিও রেকর্ড এবং খতিয়ানভুক্তিতে ও মৌজায় পরিবর্তন করা জরুরি বলেও তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি ছবিতে স্কুলের এমন নাম দেখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আক্রাম আল হোসেন। তিনি আমাদেরকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জেনে নাম পরিবর্তনের বিষয়ে প্রস্তাব পাঠাতে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে স্কুলে গিয়ে সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষকদের সাথে কথা বলে সকল তথ্য সংগ্রহ করে আমরা নাম পরিবর্তনের জন্য জরুরি সভায় বসি। সেখানে ওই গ্রামের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া মইশাখালি নামে একটি খালের নামও প্রস্তাবনায় এসেছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসক বললেন যেহেতু এমন একটি নাম পরিবর্তন করাই হচ্ছে পুনরায় সেটিতে জায়গা বা খাল বিলের নাম না দিয়ে সুন্দর একটি নাম দেয়া হোক। পরবর্তীতে তিনি ‘আলোর ভুবন’ নামটি প্রস্তাবনা করেন। এটিই আমরা প্রস্তাব আকারে আজ দুপুরে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।
উল্লেখ্য, স্কুলটিতে বর্তমানে ৮০ জন ছেলে ও ৯৯ মেয়ে অর্থাৎ মোট ১৭৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।