রাত ১০:৪২ রবিবার ২১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ১৫ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি

হোম অন্যান্য অনেক বছর হয় আমাকে সামলানোর কেউ নেই: প্রিয়তী

অনেক বছর হয় আমাকে সামলানোর কেউ নেই: প্রিয়তী

লিখেছেন dipok dip
Spread the love

ছোটবেলায় মা আমাকে কাঁদতে দিতেন না। কাঁদলেই আমার শ্বাসকষ্ট হতো বলে যেকোনো ভাবেই হোক মা আমাকে সামলে নিতেন। আমি অবশ্য সহজেই কান্না করার মেয়েও নই। অনেক কষ্ট- দুঃখ- বিষাদ চাপা রাখতে রাখতে কোন একটা দিন আসে সেদিন বাঁধ ভেঙ্গে যায়। আর যেহেতু হৃদয়ের বেরিবাঁধ ভেঙ্গে পড়ে তখন হয়তো আমার ফুসফুস সেই ধাক্কা সামলাতে পারেনা বলেই শ্বাসকষ্ট হয় বলে আমার ধারণা। যেটাকে ডাক্তাররা বলে ইমোশনস অভারফ্লো (যদি ভুল বলে না থাকি)…

অনেক বছর হয় অবশ্য আমাকে সামলানোর কেউ নেই। অবশ্য এই পথ আমারই বাছাই করা তাই কোন অভিযোগও নেই। যেহেতু আমাকে আমি ছাড়া সামলানোর কেউ নেই, সুতরাং শ্বাসকষ্টের মাত্রা প্রায়ই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়া ধরলেই জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল দিলে প্যারামেডিক্সরা এসে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

জানেন, আমি হঠাৎ করে অসুস্থ হওয়া-ও এলাউড না। যত জরুরী অবস্থাই ঘটুক না কেন, আমার প্রথম চিন্তা আসে, আমাকে হাসপাতালে যেতে হলে বাচ্চাদের কাছে কে থাকবে? কাকে ফোন দিবো? কে এই অসময়ে ফোন ধরবে? হাহাহা , শান্তিমতো যেনো অসুস্থও হতে পারি না।

এইতো দুই সপ্তাহের আগে এমনই এক মুহূর্তে চলে এসেছিলো, তীব্র সেই শ্বাসকষ্ট, আবার ঐ ঘোড়ার ডিমের ইমোশনস ওভার ফ্লো।

এদিকে এমনিতেই করোনা কেউ কারোর বাসায় যাচ্ছে না। আমার ফোন করার জায়গা শুধু একটা মাত্রই অবশিষ্ট ছিলো। ৯১১-এ ফোন করে শুধু দুটো শব্দ বলতে পেরেছিলাম ‘’Can’t Breathe’’ , আর এই ছবিতে যে আইরিশ ভদ্রলোকটি, উনাকে ফোন করে বলতে পেরেছি শুধু একটি শব্দ ‘’Come’’ । হাসপাতাল থেকে আমার বাসা দুরত্ব ২০ মিনিট ড্রাইভ এবং উনার বাসা থেকে এক ঘণ্টার । কিন্তু এ্যাম্বুলেন্স এবং উনার গাড়ী একই সাথে বাসার সামনে উপস্থিত হয়। কিভাবে সম্ভব হয়েছিলো No Idea । আসলে তিনি একজন হেলিকপ্টার পাইলটের সাথে সাথে যে তিনি একজন কার রেসিং ড্রাইভার ছিলেন ওটা মনে ছিলো না।

আমার সেদিন মনে পড়ছিল আমার এক বাঙালী বন্ধুর কথা, সে আমার এই আইরিশ বন্ধুকে দেখতে পারতো না। (সে অবশ্য আমার আশেপাশে কোন বন্ধুকেই দেখতে পারতো না, হাহাহা) আমার গত বছর যেদিন বাইক দুর্ঘটনা হয়, তার দুই দিন পর বাঙালী বন্ধু আমাকে দেখতে আসে, তার নেয়া প্রথম খোঁজটি যা ছিলো তাহলো, আমার আইরিশ বন্ধু আমার কাছে এসেছিল কিনা? আমি আমার আইরিশ বন্ধুর দিকে প্রায়ই এক পলকে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি , আচ্ছা এ জাতীয় প্রশ্ন গুলো সে কেন কখনো করেনা?

আমি সাথে সাথে এও ভাবি, আচ্ছা তিনি তো একজন বৈমানিক, একজন ইঞ্জিনিয়ার, একজন নাবিক, একজন মডেল, একজন ব্যবসায়ী, গিটার ড্রাম পিয়ানো যন্ত্রগুলো কি সুন্দর করে বাজায় , কি সুন্দর কবিতা লিখেন, এতো এতো গুন যার কিন্তু উনার মধ্যে ঔদ্ধত্য টাইপ আচরন নাই কেন? কেন উনাদের বিন্দুমাত্র অহংকার নেই, কিংবা আমি এই- আমি সেই এই টাইপ এক্সট্রা শো- অফ টাইপ ফুটানি দেখায়না কেনো? কেন নাই আমার উপর আলাদা করে মালিকানা (own) আদায় করার চেষ্টা? কেন নাই আমার ব্যক্তিগত জীবনে কি চলে তার উপর নাক গলানো কিংবা অনধিকার চর্চা করা কিংবা জোরপূর্বক হস্তক্ষেপ করে অধিকার নেয়ার চেষ্টা? আমাকে বিচার করার নেই কোন আলাদা কৌতুহল। কেন নাই এগুলো উনাদের মধ্যে? আমি নিজের দিকে তাকাই, বার বার নিজেকে আবারো সংস্কার করি।

সাতবছর বয়স আমাদের বন্ধুত্বের তবে উনাকে নিয়ে আমি আগে কখনো লিখিনি কিংবা সেইভাবে ছবিও দেইনি, কারণ উনার প্রাইভেসিকে সম্মান করেছি। সাধারণত্ব আইরিশ পুরুষেরা একটু সোশ্যাল মিডিয়া বিমুখ, আজকাল তিনি নিজ থেকেই অনুমতি দেয়ার ফলে শেয়ার করার সুযোগ পেয়েছি।

আসলে কি জানেন, বছরের পর বছর বন্ধুত্ব এমনি এমনি টিকে না, বন্ধুত্ব বেঁচে থাকে তিনটা স্তম্ভের উপর- বিশ্বাস, আস্থা এবং ভরসা। অন্যান্য সব সম্পর্ক ঝরে যেতে পারে কিন্তু সত্যিকারের বন্ধুত্ব রয়ে যায়।

লেখক: মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আইরিশ বৈমানিক, আন্তর্জাতিক বিউটি কুইন, অভিনেত্রী, মডেল,  

 

You may also like

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More