প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশিরা পাড়ি জমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এছাড়া, বিপুল সংরক্ষণ মানুষ অবৈধভাবেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেন। কর্মসংস্থানসহ বৈধভাবে ভিনদেশে যাওয়া এসব প্রবাসীর হিসাব রাখে সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএমইটি।
তবে সঠিক কতজন বাংলাদেশে প্রবাসে অবস্থান করছেন তার সঠিক কোন তথ্য দেশের কোন সংস্থার কাছেই নেই। বিএমইটির হিসাবে স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ২৬ লাখ বাংলাদেশি কর্মসংস্থানের জন্য বৈধভাবে দেশের বাইরে গেছেন। তবে অবৈধভাবে বা শিক্ষার জন্যও বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন।
তবে এসব প্রবাসীদের মধ্যে কতজন দেশে ফিরে এসেছেন বা কি অবস্থানে কোথায় আছেন সে পরিসংখ্যান নেই বিএমইটির কাছে। জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রবাসীদের আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। তাঁদের কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভের অঙ্কটাও এখন বেশ শক্তিশালী।
পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ১৯৭৬ সালে মাত্র ২৪ লাখ ডলার বা প্রায় ৩৬ কোটি টাকার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। সে তুলনায় রেমিট্যান্স এখন অনেক বেড়েছে। কেবল গত বছরই রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৫৫৫ কোটি ডলার বা এক লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ৩৭৪ কোটি ডলার বা ১৪ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
সৌদি আরব: বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি নাগরিক রয়েছেন সৌদি আরবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩৮ লাখ ৮৪ হাজার বাংলাদেশি পাড়ি জমিয়েছেন। মাত্র ২১৭ জন দিয়ে ১৯৭৬ সালে এই শ্রমবাজারের যাত্রা শুরু। ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ ৫১ হাজার বাংলাদেশি কাজ নিয়ে গেছেন সৌদি আরবে। আর গত আগস্ট পর্যন্ত সেখানে পাড়ি জমিয়েছেন দুই লাখ ৩৪ হাজার বাংলাদেশি।
আরব আমিরাত: স্বাধীনতার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতই ছিল বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার। তবে ধীরে ধীরে এ শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। ২০০৮ সালে দেশটিতে এক বছরে সবচেয়ে বেশি চার লাখ ১৯ হাজার বাংলাদেশি গেছেন। তবে ২০১৩ সালের পর থেকে এ সংখ্যা বেশ কমে গেছে। গত বছর মাত্র তিন হাজার ২৩৫ বাংলাদেশি দেশটিতে পাড়ি জমানোর সুযোগ পেয়েছেন। ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আরব আমিরাতে কর্মসূত্রে পাড়ি জমিয়েছেন ২৩ লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশি, যা মোট জনশক্তি রপ্তানির প্রায় ১৯ ভাগ।
ওমান: প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবস্থানের দিক থেকে ৩য় অবস্থানে আছে পারস্য উপসাগরীয় দেশ ওমান। এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ ৭৭ হাজার বাংলাদেশি সেখানে কাজ নিয়ে গেছেন। তবে তিন বছর ধরে এই দেশেও কর্মসূত্রে বাংলাদেশি যাওয়ার সংখ্যা কমছে। ২০১৬ সালে ওমানে পাড়ি জমিয়েছেন এক লাখ ৮৮ হাজার বাংলাদেশি। আর গেল বছর তা নেমে এসেছে ৪৭ হাজার ৭৮৭ জনে।
মালয়েশিয়া: বাংলাদেশিদের কাছে কর্মক্ষেত্র হিসেবে মালয়েশিয়া আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে শুরু করে মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে। ২০০৭ সালে এশিয়ার দেশটিতে সবচেয়ে বেশি দুই লাখ ৭৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কাজের জন্য গেছেন। মাঝে এই সংখ্যা কমলেও সম্প্রতি আবার বেড়েছে। গত বছর কর্মসূত্রে দেশটিতে গেছেন এক লাখ ৭৬ হাজার বাংলাদেশি। সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে কাজ করতে গেছেন সাড়ে ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশি।
কাতার: বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রপ্তানিতে কাতারের বাজার ২০০৬ সাল পর্যন্ত ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তবে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এই দেশটিও এখন বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। কাতারের ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন সেখানে অনেক বাংলাদেশির জন্যই কাজের সুযোগ তৈরি করেছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে কাজ নিয়ে গেছেন প্রায় আট লাখ বাংলাদেশি।
সিঙ্গাপুর: বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমিকদের জন্য পছন্দের এক গন্তব্য সিঙ্গাপুর। এখন পর্যন্ত সাত লাখ ৬৫ হাজার বাংলাদেশি এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশটিতে পা রেখেছেন, যা মোট প্রবাসীর ছয় ভাগের কিছু বেশি। এর মধ্যে ২০১৩ সালে সবচেয়ে বেশি ৬০ হাজার বাংলাদেশি সিঙ্গাপুর গেছেন।
কুয়েত: কুয়েতের মতো গুরুত্বপূর্ণ এক শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলা চলে। ২০০৮ থেকে ২০১৩—এ সময়ে মাত্র ৪১৪ বাংলাদেশি দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে এ সংখ্যা বাড়তে শুরু করলেও গত দুই বছর তা আবার পড়তির দিকে। এখন পর্যন্ত কুয়েতে ছয় লাখ ২৪ হাজার বাংলাদেশি গেছেন, যা মোট প্রবাসীর প্রায় পাঁচ ভাগ।
বাহরাইন: কর্মসূত্রে বাহরাইন গেছেন চার লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশি। এর মধ্যে ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ৭২ হাজার বাংলাদেশি কাজ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন পারস্য উপসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটিতে।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি রয়েছেন। বিএমইটির কাছে ২০০২ সাল থেকে দেশটিতে পাড়ি জমানো বাংলাদেশিদের তথ্য রয়েছে। সে হিসাব অনুযায়ী পশ্চিম ইউরোপের দেশটিতে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫৫ হাজার বাংলাদেশি বৈধপথে কাজ করতে গেছেন।
এছাড়া ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের ধনী-দরিদ্র সকল দেশেই রয়েছে বাংলাদেশি প্রবাসীদের কম-বেশি পদচারণা। দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধারা।