করোনা প্রাদুর্ভাবে পরবর্তী সময়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ আগের চেয়ে কমবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও চাকরির বাজার আগের জায়গায় ফিরবে না বলেই মত তাদের।
এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, করোনা কমসংখ্যক লোক দিয়ে বেশি কাজ করা শিখিয়েছে সঙ্গে অনলাইন নির্ভরতা বাড়িয়েছে এবং ঘরে বসেই কাজ করার পদ্ধতিতে অভ্যস্ত করেছে। এ কারণে প্রযুক্তির ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এই বৃদ্ধির কারণে আরও একটি কথা বিশেষজ্ঞরা বলছেন। আর তা হচ্ছে, যারা তথ্য-প্রযুক্তিসহ নানা কাজে দক্ষ এবং যেকোনো ধরনের কাজ করার মানসিকতা রয়েছে, তাঁদের আগামী দিনে চাকরি পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।
করোনার শুরু থেকেই একে একে স্থগিত হয়েছে বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা। এই সময়ে সরকারি-বেসরকারি নতুন কোনো চাকরির বিজ্ঞপ্তি নেই বললেই চলে। ফলে চাকরিপ্রার্থীরা চরম হতাশায় ভুগছেন।
চাকরির বাজার নিয়ে সম্প্রতি এডিবি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে চাকরির বাজারে ধস নেমেছে। চাকরির বিজ্ঞাপন ব্যাপকভাবে কমেছে। গত বছরের মার্চের তুলনায় এ বছরের মার্চে চাকরির বিজ্ঞাপন ৩৫% কম ছিল। গত এপ্রিলে কমেছে ৮৭%। এপ্রিলে পোশাক ও শিক্ষা খাতে ৯৫% কম চাকরির বিজ্ঞাপন দেখা গেছে। উৎপাদনমুখী শিল্পে ৯২% কম চাকরির বিজ্ঞাপন এসেছে। স্বাস্থ্য খাতে চাকরি কমেছে ৮১%। তথ্য-প্রযুক্তিকে আগামী দিনের সম্ভাবনা হিসেবে ধরা হলেও সেখানে চাকরির বিজ্ঞাপন কমেছে ৮২%। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরির বিজ্ঞাপন কমেছে ৬৪%।
জানা যায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত ৪ মাসে সরকারি ও বেসরকারি বড় প্রতিষ্ঠানের শতাধিক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে।
আগে চাকরিপ্রার্থীরা সব সময়সংবাদপত্রে নজর রাখলেও গত ৪ মাসে সেখানে নতুন কোনো সরকারি বা বেসরকারি বড় চাকরির বিজ্ঞপ্তি ছিল না। সংবাদপত্রে সবচেয়ে বেশি চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু গত কয়েক মাসে এসব প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞপ্তি ছিল হাতে গোনা।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকার ২৩ লাখ ৭৭ হাজার এবং অশিক্ষিত বেকার তিন লাখ। বেকারদের মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষিত, যারা উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস। উচ্চশিক্ষা পর্বের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা শেষ করা বেকারের সংখ্যা চার লাখ পাঁচ হাজার। যদিও বাস্তবে বেকারের সংখ্যা আরও বেশি।
ইউজিসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৪০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরসহ সমমানের বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সংখ্যা সাত লাখ ১৪৮ জন। আর ১০৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে উত্তীর্ণের সংখ্যা ৬৮ হাজার ৭২৯ জন।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে সব পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। ফলে অনেকেই পড়ালেখা শেষ করে চাকরির প্রত্যাশায় থাকলেও চূড়ান্ত পরীক্ষাই শেষ করতে পারছেন না। এ সকল কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে চাকরির বাজারে বড় ধসের পাশাপাশি চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা।