করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠছেন বেশিরভাগ রোগী। তবে সুস্থ হয়ে ফেরার পর অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে নানারকম উপসর্গে ভোগার কথা জানাচ্ছেন কেউ কেউ; যে সমস্যাগুলো কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার আগে তাদের কখনো ছিলই না।
সাব্বির সাদিক নামে একজন বলেন, হাঁটুর জোড়াগুলোতে ব্যথা করছে, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা করছে। টানা অনেকক্ষণ বসে কাজ করতে পারছি না। অনেকক্ষণ বসে থাকলে দেখা যাচ্ছে যে, ওই জায়গাটা একটু অবশ অবশ মনে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আগের মতো টানা কাজ করতে পারছি না। দেখা যাচ্ছে, প্রতি আধা ঘণ্টা পর পর সিট থেকে উঠে একটু হাটাহাটি করছি, পানি খাচ্ছি বা ঘণ্টা খানেক পর পর ক্ষুধা লাগছে; কিছু খেতে হচ্ছে আরকি।
সোনিয়া আক্তার নামে করোনাজয়ী একজন বলেন, হালকা ভুলে যাচ্ছি আমি। কোনো কথা কাউকে বলবো বলে ভাবলাম, কিন্তু একটু দেরি হলে সেটা ভুলে যাই।
তিনি জানান, তার এলার্জির সমস্যা অনেক বেড়েছে। বলেন, কথা বলতে বলতে বুকের ভেতর ব্যথা অনুভব করেন।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরা করোনা থেকে সেরে উঠেছেন এক মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যথা, দুর্বলতা, হাঁপিয়ে উঠা, অস্থিরতার মতো আরো নানা ধরনের সমস্যা পার করতে হচ্ছে তাদের। এমনকি টেস্টে নেগেটিভ হবার পর অনেকদিন পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
তাফসিয়া জামান নামে একজন সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, আমি বাসায় এসেছি এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে। এখন জুলাই মাস। এখন পর্যন্ত আমার সেই শ্বাসকষ্টটা আছে। আমি যদি খুব বেশি অ্যাকটিভিটি একদিনে করে ফেলি তাহলে আমি পুরা বিছানায় পড়ে যাই। মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যেও আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়; আমি লাফ দিয়ে উঠি। অথচ আমার জীবনেও ফুসফুসের সমস্যা ছিলো না, অ্যাজমার সমস্যা ছিলো না।
যে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা
বিশ্বজুড়েই এখন দেখা যাচ্ছে, ভাইরাস থেকে সেরে উঠলেও ফুসফুস, স্নায়ুতন্ত্রসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন রোগীরা। বাংলাদেশের অনেকেই সেরে উঠার পর পরবর্তী প্রতিক্রিয়া নিয়ে চিকিৎসকদের স্বরণাপন্ন হচ্ছেন। এক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক (মেডিসিন) এইচ. এম. হামিতুলাহ মেহেদী বিবিসি বাংলাকে বলেন, যার যে সমস্যা সে হিসেবে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি। কিছু এক্সারসাইজ আছে যেগুলো ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এর পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার, প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম এবং ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শুধু শারীরিকভাবেই নয়, মানসিকভাবেও ভালো থাকার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
তিনি বলেন, ঘুম না হওয়া, মাঝেমধ্যে দুশ্চিন্তা হয়…, এসব ক্ষেত্রে পারিবারিক সাপোর্টটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাদের ঘুমের বেশি সমস্যা তারা মৃদু মাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেতে পারেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, চিকিৎসাকালীন উপসর্গের তীব্রতা বেশি হলে সেটা সারতেও বেশি সময় লাগতে পারে। তবে পুরোপুরি সারতে কত সময় লাগতে পারে তা এখনো অনিশ্চিত।