কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর বাজারগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজ মরিচের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে ১৬০ টাকা কেজির নিচে কাঁচা মরিচ নেই; দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে অন্তত ১০০ টাকা।
খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা কমায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজের প্রভাবে সম্প্রতি দাম বেশ কমে যায়। তবে কোরবানির ঈদ কাছাকাছি চলে আসায় এখন পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে সামনে আরও বাড়বে।
ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, গত চার মাসে অন্তত ১২ বার পেঁয়াজের দাম ওঠা-নামা করছে। অবশ্য করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার আগেও পেঁয়াজের দামে বেশ অস্থিরতা দেখা যায়। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজধানীর বাসিন্দাদের মধ্যে পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাড়তি কিনে রাখার এক ধরনের হিড়িক পড়ে যায়। এতেই ৪০ টাকার পেঁয়াজ এক লাফে ৮০ টাকায় উঠে যায়।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে ভোক্তা অধিদফতর ও র্যাব। ঢাকার বিভিন্ন বাজারের পাশাপাশি বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও অভিযান চালিয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়। এতে আবারও দফায় দফায় দাম কমে পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকায় নেমে আসে।
তবে রোজার আগে আবারও অস্থির হয়ে ওঠে পেঁয়াজের বাজার। কয়েক দফা দাম বেড়ে রোজার শুরুতে পেঁয়াজের কেজি ৫৫ টাকায় পৌঁছে যায়। এরপর রোজার মাঝামাঝি সময়ে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে ৪৫ টাকায় নেমে আসে। এ পরিস্থিতে ঈদের আগে আবার দাম বেড়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা হয় পেঁয়াজের কেজি।
তবে ঈদের পর চাহিদা কমলে পেঁয়াজের কেজি আবার ৪০ টাকায় নেমে আসে। অবশ্য এ দামও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। জুনের মাঝামাঝি সময়ে চাহিদা বাড়লে আবার পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৫৫ টাকায় ওঠে। এ পরিস্থিতিতে বাজারে বাড়তে থাকে আমদানি করা পেঁয়াজের।
ফলে চলতি মাসের শুরুতে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ২০ টাকায় নেমে আসে। যার প্রভাবে কমে দেশি পেঁয়াজের দামও। ৫৫ টাকা থেকে কমতে কমতে গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকা পর্যন্ত নেমেছিল।
এ পরিস্থিতিতে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ক্রেতারা পেঁয়াজ কেনার পরিমাণ বাড়ানোয় আবার দাম বাড়তে শুরু করেছে। ৩০ টাকায় নেমে যাওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকা হয়েছে।
মালিবাগের এক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় দেশি ও আমদানি উভয় ধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজার থেকে এখন কেজিতে ৫ টাকা বেশি দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। ফলে আমরা বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সামনে কোরবানির ঈদ কেন্দ্রিক মজুত রাখা যায় এমন পণ্য কেনা শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যে পেঁয়াজ অন্যতম। দাম কম থাকায় অনেকে বাড়তি পেঁয়াজ কিনছেন। যার প্রভাব বাজারে পড়তে শুরু করেছে। ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে।
একজন পেঁয়াজ ক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজি কিনেছিলাম। আজ (রোববার) সেই পেঁয়াজের দাম ৪৫ টাকা কেজি চাচ্ছে। দোকানদার পরিচিত, তাই দাম আরও বাড়তে পারে জানিয়ে বেশি করে পেঁয়াজ কিনে রাখার পরামর্শ দিলেন।
এদিকে বন্যার কারণে সরবরাহ কমায় কাঁচা মরিচের দামও বেড়েছে। বাজার ও মানভেদে কাঁচামরিচ সর্বোচ্চ ২০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। ১৬০ টাকা কেজির নিচে কাঁচা মরিচ নেই বাজারে।
রামপুরার এক সবজি বিক্রেতা বলেন, বন্যা ও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে।পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচের আমদানি কম, যে কারণে আমাদের কিনতেই হচ্ছে দেড়শ টাকা কেজি। আবার হাতবদলের মধ্যে দিয়ে মরিচ ওজনে কিছু কমেও যায়। এই কারণে খুচরায় ২০০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।