করোনা মহামারি ঠেকাতে নানা ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। টিকা তৈরির তেমনই এক প্রযুক্তি এমআরএনএ বা জিনভিত্তিক আরএনএ। এর মাধ্যমে আসল ভাইরাস ব্যবহার না করে ভাইরাসের একটি প্রতিচ্ছবি ল্যাবে তৈরি করা হয়। এই তৈরি করা ভাইরাস মানুষের শরীরে গিয়ে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে। ফলে সত্যিকার ভাইরাস শরীরে ঢুকলেও তার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তৈরি হয়।
বিভিন্ন দেশের মতো করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে জার্মানিও। বার্লিনের গবেষকদের দম ফেলার ফুরসত নেই। তাদের হাতে এত কাজ যে দুটি শিফটে সেগুলি সারতে হচ্ছে। জেপিটি পেপটাইড কোম্পানির রসায়নবিদদের কাজকে পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স কিংবা দমকল কর্মীদের কাজের মতো মর্যাদা দেয়া হয়েছে। কারণ, তারা যতো দ্রুত সম্ভব করোনাভাইরাসের টিকা আবিস্কারের কাজে অবদান রাখছেন
জেপিটি কোম্পানির প্রধান হলগার ভেনশু বলেন, আমরা এখানে পেপটাইড ভিত্তিক সরঞ্জাম উৎপাদন করি। এরমাধ্যমে টিকা ডেভেলপাররা রোগীদের প্রতিরোধ ক্ষমতা পরিমাপ করতে পারেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নজর রাখতে পারেন।
পেপটাইইড আসলে প্রোটিনের খণ্ড। এই কোম্পানিতে লাখ লাখ পেপটাইড তৈরি হয় এবং করোনাভাইরাসের উপরিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিনের গঠন অনুযায়ী সাজানো হয়।
জানুয়ারি মাস থেকে এই লক্ষ্যে কাজ চলছে। এরমধ্যে চূড়ান্ত পণ্য বাজারে এসে গেছে। টিকা মানুষের শরীরে সত্যিই কাজ করছে কিনা সেটির মধ্যমে তা জানতে সুবিধা হবে। করোনা ভাইরাসের টিকা তৈরির চাপের কারণে ভিন্ন পথেরও সন্ধান চলছে। যেমন আরএনএ ভিত্তিক টিকা। এর আওতায় দুধ হিসেবে এক এমআরএনএ ইনজেকশন দিতে হবে; যা আসলে ভাইরাসের একটি ব্লুপ্রিন্ট বা প্রতিচিত্র। মানুষের শরীরের কোষ সেই ব্লুপ্রিন্ট কার্যকর করে ভাইরাসের একটি অংশ তৈরি করতে পারে। শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসের এসব অংশকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এন্টিবডি তৈরি করবে এমনটাই আশা করা হচ্ছে। এরফলে আসল ভাইরাস শরীরে হামলা করলে শরীর আগে থেকেই প্রস্তুত থাকবে এবং এন্টিবডি কাজে লাগিয়ে হামলার মোকাবেলা করবে।
সেটা আদৌ সম্ভব কিনা জেপিটি কোম্পানির সরঞ্জাম দিয়ে তা পরীক্ষা করা যায়। জিকা এবং ইবোলা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে এই প্রযুক্তি সফলভাবে কাজে লাগানো হয়েছে।
বার্লিনের এই কোম্পানি পরোক্ষভাবে টিকা তৈরিতে অংশ নিচ্ছে। কারণ এটি বিশ্বখ্যাত বায়োনিটেক কোম্পানির অংশ। করোনার টিকা তৈরির ক্ষেত্রে জার্মানির এই কোম্পানিটির প্রতি গোটা বিশ্বের নজর রয়েছে।
জেপিটি কোম্পানির প্রধান হলগার ভেনশু বলেন, আমি মনে করি এভাবে বলা ঠিক নয়। এ মুহূর্তে বাজারে কোনো একটি টিকা আনা সবচেয়ে জরুরি। কে সেই টিকা আবিষ্কার করলো তাতে কিছু আসে-যায় না। আমরা এক্ষেত্রে অবদান রাখতে চাই। হয়তো আমরাই প্রথম সাফল্য পাবো। কিন্তু এই মুহূর্তে সাহায্য করার নৈতিক তাড়না কাজ করছে।
সূত্র: ডয়েচেভেলে।