বিশ্বের ইসলামি ব্যাংক ও বড় খেজুর বাগানের মালিক শেখ সুলায়মান আল রাজী মারা গেছেন। গত ৩০ জুন মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৭ বছর।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের অনন্য দানশীল ব্যক্তি ছিলেন আল রাজী। তিনি দানের জন্য কথা কিংবদন্তি হয়ে থাকবেন। পবিত্র রহজান মাসে তার সবচেয়ে বড় বাগানের খেজুর দিয়েই মক্কা ও মদিনার রোজাদারদের ইফতার করাতেন।
দেশটির সংবাদ সংস্থা এসপিএ একটি প্রতিবেদনে এ কথা জানায়।
প্রতিবেদনে দেখা হয়েছে, শূন্য থেকে বিশ্বের ১২০তম ধনী মানুষে পরিণত হয়েছেন তিনি। শুধু আয় করেনি; দু’হাতে দানও করতেন। সৌদির এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান সুলায়মান।
একবার শিক্ষা সফরে যেতে পরিবারের কাছে এক রিয়াল চেয়ে পাননি। কেননা এক রিয়াল দেয়ার মতো সামর্থ্য তার পরিবারের ছিল না। শিক্ষা সফরের আগের দিন ক্লাসে শিক্ষকের প্রশ্নের সঠিক জবাব দেয়ায় এক রিয়াল উপহার পান সুলায়মান। মুহূর্তেই তার কান্না পরম আনন্দে পরিণত হয়। পরে সহপাঠীদের সঙ্গে শিক্ষা সফরে যাওয়ার সুযোগ পান।
তার শিক্ষাজীবন অভাবের কারণে দীর্ঘায়িত হয়নি। অর্থউপার্জনের জন্য ৯ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেন তিনি। প্রথমেই বন্দরে মাল ওঠানো নামানো এরপর দিনমজুর, শ্রমিক, বাবুর্চি, ওয়েটার, দোকান কর্মচারীর কাজ করেন। উপার্জনের অর্থ দিয়ে মুদি দোকান দেন। বিয়ের খরচের জন্য দোকান বিক্রি করে দেন। তারপর ভাইয়ের সঙ্গে একত্রে ব্যবসা শুরু করেন।
১৯৭০ সালে ভাইয়ের কাছ থেকে আলাদা হয়ে একা মুদ্রা বিনিময় ব্যবসা শুরু করেন। প্রথমে সৌদি আরবে ৩০টি শাখা পরে মিশর, লেবানন ও জিসিসি দেশগুলোতেও শাখা খুলেন। এইভাবে তার ভাগ্যের চাকা বদলে যায়। প্রতিষ্ঠা করেন আল রাজী ব্যাংক ও আল রাজী ইসলামি গ্রুপসহ আরও অন্যান্য ব্যবসা।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় খেজুর বাগানটি তার। তার বাগানটিতে আছে দুই লাখ খেজুর গাছ। মধ্য সৌদি আরবের আল কাসিম প্রদেশে অবস্থিত এ বাগানের আয়তন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর। এ বাগানে ৪৫ ধরনের খেজুর আবাদ হয়।
১৯৯০ সালে এখানে গম এবং তরমুজও করা হতো। কিন্তু ১৯৯৩ সালের পর শুধু খেজুর গাছ লাগানো হয়। বাগানটি গিনেজ বুকে স্থান করে নেয়। এই বাগানটি আল্লাহর রাস্তায় পুরোপুরি ওয়াকফ করে দেন। রমজান মাসে কাবা শরীফ ও মসজিদে নববী এবং অন্য মসজিদসমূহে এ বাগানের খেজুর দিয়েই ইফতার করানো হয়। মুসলিম দেশগুলোতে এ বাগানের খেজুরই উপহার হিসেবে পাঠানো হয়। এর আয় দরিদ্রদের জন্য ব্যয় করা হয়।
ফোর্বস সাময়িকীর মতে শেখ সুলায়মান আল রাজী পৃথিবীর ১২০তম ধনী ব্যক্তি। সৌদি রয়েল ফ্যামিলির বাইরে নিজের উপার্জনে একমাত্র করপোরেট বিলিয়নিয়ার। তার সম্পদের পরিমাণ ৭.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ২০ জন মানবিক সহায়তা প্রদানকারীর মধ্যে অন্যতম।
আল রাজী ব্যাংকের ২০ শতাংশ অর্থ সৌদি দরিদ্র শিশুদের জন্য ব্যয় করা হয়। তিনি স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তিনি তার সমুদয় সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ চ্যারিটির জন্য দান করে গেছেন। বাকিটা ছেলে মেয়েদের মধ্যে বন্টন করে দেন।
তার দানশীলতা ও দেশের উন্নয়নে অবদানের জন্য সৌদি আরবের বড় পুরস্কার বাদশা ফয়সাল পুরস্কারে ভূষিত হন। ১ জুলাই, মঙ্গলবার রিয়াদে আল রাজী মসজিদে জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হয়।