প্রচলিত চাকরির সুযোগ না নিয়ে মাসুম প্রামাণিক শুরু করছেন ফ্র্রিল্যান্সিং। প্রথমে ৫ ডলার আয় দিয়ে শুরু করলেও মাসুম প্রামাণিকের এখন মাসে আয় ৩ থেকে ৪ হাজার ডলার। নিজের পাশাপাশি মাসুমের স্টোরি আইটি নামের কোম্পানিতে এখন কাজ করছেন অন্তত ১৬ জন তরুণ-তরুণী। যাদেরও বেকারত্ব ঘুচিয়ে তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থানের। মাসুম প্রামাণিকের সাফল্যের গল্পের শুরুটা ২০১৩ সালে।
ছোটবেলা থেকেই নিজে কিছু করার প্রবল ইচ্ছা ছিল তার। মাধ্যমিকের পরে শুরু করেন টিউশন। কয়েকমাসের মধ্যেই ভাল সুনাম নিয়ে নিজেই কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে শুরু করেন নিজের কোচিং সেন্টার। কয়েকমাস পরে পাবনা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে কম্পিউটার বিভাগে সুযোগ পেয়ে চলে আসেন পাবনায়। শুরু হয় কম্পিউটারের উপরে ক্যারিয়ার গঠনের।
প্রথমে ডোল্যান্সার নামের একটি সাইটে কাজ শুরু করেন মাসুম প্রামাণিক। নতুন একাউন্ট নেয়ার জন্য গুনতে হয় ৫০০০ টাকা। একমাস পরে যখন টাকা হাতে পেলেন কিছুটা ভরসা পেলেন এবং নিজের সমস্ত জমানো টাকা দিয়ে শুরু করেন আরও কয়েকটি নতুন একাউন্ট নিয়ে। ২ মাস ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই অথৈই সাগরের জলে পড়তে হয় মাসুমকে। ভুয়া কোম্পানির কাছে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে হতাশার সাগরে ডুবতে হয় তাকে। তবে হাল ছাড়েননি তিনি।
পুনরায় নিজেকে দক্ষতা করে গড়ে তোলার জন্য শুরু করেন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের উপরে রিসার্চ করা। সেখানেও সফলতা ধরা দেয় তার কাছে। এরপর (মার্কেটপ্লেস) ফাইবার এবং আপওয়ার্কের পাশাপাশি সার্চ ইঙ্গিন অপটিমাইজেশন, কারিগরি সেবা এবং ওয়েব ডিজাইনে নিজেকে দক্ষ করে তুলেন। এরপরে ওডেস্ক নামে একটি কোম্পানির সাইডে একাউন্ট করে আবারও শুরু করেন ফ্র্রিল্যান্সিং। ঠিক দুইমাস পর ৫ ডলারের একটি কাজ সফল ভাবে সম্পন্ন করেন তিনি। এই ৫ডলারই ঘুরিয়ে দিয়েছে তার জীবনের মোড়।
ফ্র্রিল্যান্সার মাসুম প্রামাণিক জানান, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৪ বছরে ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি প্রশিক্ষক হিসেবে চাকুরী করেছেন স্কিলস টু সাক্সিসিড, লার্নিং এ্যান্ড আরনিং ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্ট, স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্ট প্রকল্পে। ২০১৭ সালে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় একটি টিম নিয়ে আবার নতুন উদ্যমে শুরু করেন, তবে এবার লক্ষ একটু বড়। এখন তিনি একটি ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি করতে চান। ২০১৭ সালের শেষের দিকে শুরু হয় এজেন্সি করার লক্ষ নিয়ে আবারো ফ্রিল্যান্সিং পেশায় পুরোদমে যাত্রা। শুরুটা কঠিন হলেও থেমে যাননি বরং টিমকে দিয়েছেন সাহস, নিজেও ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। স্টোরি আইটি নামে তার বর্তমান কাজ করছেন ১৬ জন তরুণ-তরুণী।
মাসুম প্রামানিক বলেন, ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ এই দুই বছরে আপওয়ার্কে ২৫০ টি, ফাইবারে ২০০টি এবং স্থানীয় ১০০টি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছি। বর্তমানে মার্কেটপ্লেসের বাইরে কানাডিয়ান এজেন্সি ছি এন এস, আমেরিকান এজেন্সি ব্রাইট হাউস, অস্ট্রেলিয়ান এজেন্সি ভেট এসই এর সাতে কাজ করছেন। এছাড়া এ্যাফিলিয়েট, এডসেন্স সাইট করেছি ২০টির বেশি।
মাসুম প্রামাণিক বলেন, প্রথম যে দিন ৫ডলার আয় করেছিলাম, সেদিনের কথা আজও বারবার মনে করিয়ে দেয়। দিনে প্রায় ৫ বার প্রোফাইলে গিয়ে রিভিউটা দেখতাম, কত ডলার যোগ হয়েছে। তবে আইটি সেক্টরে বর্তমানে অনেক তরুণ-তরুণীরা আসছে। তাদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা নিজেকে দক্ষ করে লেগে থাকতে হবে, সাফল্যে একদিন ধরা দিবেই।