বর্তমান করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা প্রভাব ফেলেছে গোটা পৃথিবীর অর্থনৈতিক খাতে। মহামারি পরবর্তী পৃথিবীতে যা এক প্রকট সমস্যার সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থনৈতিক মন্দা, দারিদ্রতা, বেকারত্বের হার বৃদ্ধির মত কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চলেছে বাংলাদেশের মত স্বল্পোন্নত দেশসহ উন্নত দেশগুলোও।
এমন সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্যে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে চাকুরি, ব্যবসার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং একটি জনপ্রিয় মাধ্যম যা বেকারত্ব দূরীকরণে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে। এর বেশ কিছু ক্যাটাগরির মধ্যে ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট খুবই জনপ্রিয় এবং সময়োপযোগী। আজ আমরা সম্ভাবনাময় ও চাহিদা সম্পন্ন ফ্রিল্যান্সিংখাত ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে একটু জানার চেষ্টা করবো।
আচ্ছা বলুন তো? তথ্যপ্রযুক্তির আজকের বিশ্বে ওয়েব সাইট ছাড়া কোনো ছোট বা বড় প্রতিষ্ঠান কল্পনা করা সম্ভব? এমনকি আজকাল ব্যক্তিগত তথ্য সংবলিত ওয়েব সাইটের ব্যাপকতাও চোখে পড়ার মত। তো বুঝতেই পারছেন! ক্যারিয়ার হিসেবে ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট কিন্তু ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন এবং ভবিষ্যতে তা আরও বৃদ্ধি পাবে। চলুন, সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে এই সেক্টরে দক্ষতা বাড়াবেন।
ওয়েব ডিজাইন:
ওয়েব ডিজাইন হল একটি ওয়েব সাইট দেখতে কেমন হবে তা নির্ধারণ করা । মোটকথা, একটি ওয়েব সাইট ব্রাউজ করার পর আমরা যে লেআউট দেখি সেটিই ওয়েব ডিজাইন । যেমন ধরুন- কালার কম্বিনেশন কেমন হবে, লোগো কোথায় থাকবে, ইমেজগুলো কিভাবে থাকবে, সাইডবার থাকবে কিনা, মার্জিন থাকবে কিনা, তথ্যগুলো কিভাবে প্রদর্শিত হবে ইত্যাদি। আর এই ডিজাইনটি করতে প্রয়োজন হবে কিছু টুলস যেমন- Photoshop, Indesign এবং কিছু Markup এবং Scripting Language যেমন- HTML, CSS, Bootstrap, Javascript (Jquery)। ওয়েব ডিজাইনারদের কে Front-end Developer বলা হয়।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট:
ওয়েব ডিজাইন অনুযায়ী কোডের মাধ্যমে ওয়েব সাইটকে ফাংশনাল এবং ডাইনামিক করাই হল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট। মূলত, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর মাধ্যমে একটি ওয়েব সাইটে প্রাণের সঞ্চার করা হয়ে থাকে । এই কাজে জড়িতরা হলেন ওয়েব ডেভেলপার বা Back-end Developer। Javascript (Node JS), PHP, Python, Laravel ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজগুলোর যেকোন একটি তে দক্ষ হয়ে কাজ করতে পারেন ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে।
ওয়েব ডেভেলপারকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
১. ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপার
২. ব্যাক-এন্ড ডেভেলপার
৩. ফুলস্ট্যাক ডেভেলপার
১. ফ্রন্ট এন্ড ওয়েব ডেভেলপার:
যে ওয়েবসাইট এর বাইরের অংশ বা ক্লাইন্ট সাইট ডেভলপ করে থাকে তাকে ফ্রন্ট-এন্ড ওয়েব ডেভেলপার বলে। ক্লাইন্ট সাইট বলতে বুঝায় HTML, CSS, Bootstrap, JavaScript দিয়ে যে সাইট বানানো হয়। এগুলো সরাসরি ব্রাউজারে রান করা যায়।
২. ব্যাক এন্ড ওয়েব ডেভেলপার:
যে ওয়েবসাইটের ভিতরের অংশ বা সার্ভার সাইট ডেভলপ করে থাকে তাকে ব্যাক- এন্ড ওয়েব ডেভেলপার বলে। সার্ভার সাইট ল্যাংগুয়েজ যেমন Javascript (Node JS), PHP, Python, Laravel ইত্যাদি।
৩. ব্যাক-এন্ড ওয়েব ডেভেলপার:
ব্যাক-এন্ড ওয়েব ডেভেলপারদেরকে ডাটাবেসে সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয়। ফুলস্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার যে ফ্রন্ট-এন্ড এবং ব্যাক-এন্ড একাই ডেভেলপ করতে পারে তাকে ফুলস্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপার বলে।
এখন প্রশ্ন হল কোনটি শিখবেন? ওয়েব ডিজাইন নাকি ডেভেলপমেন্ট? ডিজাইন হল এই পেশার ফটক স্বরূপ। ভাল ডিজাইনার না হলে ভাল ডেভেলপার হওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে আপনাকে ডিজাইন পার্ট থেকেই শুরু করতে হবে।
শেখা তো হল। এবার কাজের ক্ষেত্র নিয়ে কথা বলা যাক। অনলাইনে যতগুলো জব আছে তাদের থেকে সবচাইতে বেশি চাহিদা হচ্ছে ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর। কারণ প্রত্যেক কোম্পানি এখন অনলাইন মুখি হচ্ছে। আর অনলাইন মুখি হলে তো একটা ওয়েবসাইট লাগবেই। আপনি যদি জব করতে চান তাহলে দেশের বিভিন্ন আইটি ফার্ম বা অন্য প্রতিষ্ঠান যেগুলোতে ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর কাজের সুযোগ রয়েছে সেখানে অ্যাপ্লাই করতে পারেন। এই কাজের মাধ্যমে আপনি নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। সামান্য কিছু পুঁজি দিয়ে শুরু করতে পারেন আপনার ওয়েব ডেভেলপিং ফার্ম। তবে বর্তমানে সবচাইতে জনপ্রিয় হল ফ্রিল্যান্সিং। বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস যেমন- Themeforest, Fiverr, Upwork, PeoplePerHour ইত্যাদিতে কাজ করতে পারবেন। এখানেই শেষ নয়! একাজে পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করে ঘরে বসে পৃথিবীর যেকোন নামি দামি কোম্পানির এমপ্লয়ি হিসেবে কাজ করতে পারবেন যা Remote Job নামে পরিচিত। এ জবে বছরে কয়েক লাখ ডলার পর্যন্ত ইনকাম করা সম্ভব।
তবে যে কাজই করুন না কেন পরিপূর্ণ জ্ঞান ও দক্ষতা না থাকলে সফল হওয়া অসম্ভব। তাই ইনকামের জন্য নয় নিজের দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কাজ শিখুন। শিখতে পারলে ইনকাম আসবেই।
লেখক: মুহসানাত সানজি
ট্রেইনি ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপার