বিকাল ৪:৪২ মঙ্গলবার ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ১০ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি

হোম দেশ একজন ‘প্লেব্যাক সম্রাট’; শুরু থেকে শেষ

একজন ‘প্লেব্যাক সম্রাট’; শুরু থেকে শেষ

লিখেছেন sabbri sami
প্লেব্যাক সম্রাট অ্যান্ড্রু কিশোরের শুরু থেকে শেষ
Spread the love

বাংলাদেশের সঙ্গীত ইতিহাসে অ্যান্ড্রু কিশোর এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক নক্ষত্রের নাম, তিনি ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামেই বেশি সমাদৃত। ৪ নভেম্বর ১৯৫৫ সালে জন্ম নেয়া এই নক্ষত্র ৬ জুলাই ২০২০ দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন।

তার জন্ম রাজশাহীতে। শেষ বিদায়টিও নিলেই এই রাজশাহী শহর থেকেই। সেখানেই কেটেছে তার শৈশব-কৈশর। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটাও পার করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পড়াশোনা করেছেন।

গানের নেশায় রাজধানীতে আসেন এন্ড্রু কিশোর

এক সময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে আসেন। অচেনা এই শহরে শুরু হয় তার গানের যুদ্ধ। এন্ড্রু কিশোর আব্দুল আজিজ বাচ্চু অধীনে প্রাথমিকভাবে সঙ্গীত পাঠ গ্রহণ শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর কিশোর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধক গান শ্রেণী রেডিও মধ্যে তালিকাভূক্ত ছিল। তার প্রথম গাওয়া গান হল আলম খান সুরারোপিত চলচ্চিত্র ‘প্রতীক্ষা’, সিনেমা থেকে ‘এক চোর যায় চলে’। তিনি অন্যান্য প্লেব্যাক গান রেকর্ড করেন যেমন ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘ভালবেসে গেলে শুধু’ এর মত জনপ্রিয় সব গান।

‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামে খ্যাত এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রে। সেখানে তিনি ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তাঁর কেউ’ গানে কণ্ঠ দেন। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গাওয়া গান প্রথম জনপ্রিয়তা লাভ করে।

সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙের ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যে খানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, সবাই তো ভালোবাসা চায় প্রভৃতি।

মুক্তিযুদ্ধের পর কিশোর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধক গান শ্রেণী রাজশাহী বেতার সঙ্গে তালিকাভূক্ত ছিল। কিশোর এছাড়াও টিভি নাটক, বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য প্রযোজনার উত্পাদন করে যা তার প্রবাহ মিডিয়া নামের একটি প্রোডাকশন হাউস কাজ করেন। ক্লান্তিময় পথ পেরিয়ে নিজেকে তিনি একজন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। একে একে অনেক কিছুই তার কাছে ধরা দিয়েছে প্রথম হয়ে।

বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের গানে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিলো এন্ড্রু কিশোরের

গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের গানে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন তিনি। অ্যান্ড্রু কিশোরের গাওয়া অসংখ্য জনপ্রিয় গান মানুষের মুখে মুখে। এই সুর সম্রাট আটবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার।

তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশের বহু চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ,”আমার বুকের মধ্যে খানে” প্রভৃতি। ১৯৮২ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তার অন্যতম গান হলো জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প।

আরো পড়ুন: এন্ড্রু কিশোরের জনপ্রিয় যতো গান

পারিবারিক জীবনে অ্যান্ড্রু কিশোরের দুটি সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম সঙ্গ্গা আর দ্বিতীয় জনের নাম সপ্তক। চলচ্চিত্রে নিয়মিত প্লেব্যাকের পাশাপাশি সম্প্রতি শেষ হওয়া সঙ্গীতবিষয়ক রিয়েলিটি শো বাংলাদেশি আইডলের বিচারক ছিলেন এ জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী।

জীবনের গল্প ফুরিয়ে গেল এন্ড্রু কিশোরের

৬ জুলাই সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় তার বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সন্ধ্যা ৭টা ১৩ মিনিটের দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি।

এর আগে টানা ৯ মাস সিঙ্গাপুরে ক্যানসারের চিকিৎসা নেয়ার পর গত ১১ জুন একটি বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরেছিলেন এন্ড্রু কিশোর। এরপর থেকে রাজশাহীতে বোনের বাসায় থাকছিলেন। তার দেখভাল করছিলেন বোনজামাই চিকিৎসক ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস।

এর আগে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেয়া হয় আটবারের চলচ্চিত্র পুরষ্কারপ্রাপ্ত এই বরেণ্য শিল্পীকে। সেখানে গিয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে।

সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক লিম সুন থাইয়ের অধীনে টানা কয়েকমাস কেমো থেরাপি দেয়া হয় তাকে।

You may also like

Leave a Comment

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More