বর্ণবাদ
বিসিএস পাশ কিন্তু গায়ের রং ময়লা
কিংবা তোমরা যখন বলো,
চেহারা মিষ্টি কিন্তু গায়ের রং কালো ।
তখন বর্ণবাদের মশাল মিছিল তোমরা কেন জ্বালো ?
আমার স্তন ছোট, বড়, কিনা মাঝারি
পাড়ায় পাড়ায় এই নিয়ে যখন শুরু হয়
গোপনে গোপনে হাস্যকর আহাজারি।
আমার শিক্ষা, গুন ও সব অর্জিত অর্জন
যখন চামড়ার অন্ধকারে হয়ে যায় নিমজ্জন;
আমার দেহ কাঠামো যখন সংকীর্ণতায়
বেটে, মোটা, শুকনা বা পাতলার সীমাবদ্ধতায়।
তখন বর্ণবাদের মশাল মিছিল তোমরা কেন জ্বালো ?
আমার কনুই কালো , হাঁটু কালো, বগলের নীচ কালো
তোমরা যখন তর্জনী তাক করে দেখিয়ে দেখিয়ে,
হাসি তামাশায় উল্লাসে মেতে উঠো কানা- ঘুষায় ।
তখন বর্ণবাদের মশাল মিছিল তোমরা কেন জ্বালো ?
প্রেমিকের কিংবা স্বামীর অকপট দৃষ্টি
যখন দেখি আটকে আছে
উজ্জ্বল বর্ণের কোন রমণীর কোমরে;
তার অলিখিত অভিযোগ যখন
অবিরত অনুরণিত হয় কর্ণ জোড়ায়
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে নিজেকে অভিশাপ দিয়ে
চিৎকার করে কেঁদে ফেটে পড়ি বোবা-কান্নায়,
বারংবার বলে উঠি আমি কেন কালো ?
তখন বর্ণবাদের মশাল মিছিল তোমরা কেন জ্বালো?
নিজেকে একঘরা থেকে বাঁচাতে
কিংবা এক কোণা থেকে উঠাতে
তোমাদের এক ঝলক দৃষ্টি পেতে,
কিংবা একফোঁটা মনোযোগ আনাতে;
শুধুমাত্র এক রঙের মাত্রা হাল্কা উজ্জ্বল হতে
যখন আমায় দ্রবীভূত হতে হয় রাসায়নিক দ্রব্যে।
তখন বর্ণবাদের মশাল মিছিল তোমরা কেন জ্বালো ?
আমার গায়ের বর্ণ কালো,
আত্মীয় -স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী কিংবা শ্বশুরবাড়ি
উঠতে বসতে যখন তোমরা বুলি শোনাও ধারালো ;
তখন বর্ণবাদের মশাল মিছিল তোমরা কেন জ্বালো ?
আমি তোমাদের গৃহকর্মী,
কাটি মাংস-সবজি, রন্ধন করি রোস্ট-ভাঁজি;
আমার রাতের শয়নস্থান তোমাদেরই রসুইঘরে,
অন্নজল দেয়া হয় কোন এক কোণায় গৃহতলে ।
আমায় তোমরা নোংরা বলো,
কারণ অনাদরে আমার বর্ণ কালো।
তখন বর্ণবাদের মশাল মিছিল তোমরা কেন জ্বালো ?
তোমাদের অয়োময় প্রথা, ধ্যান-ধারনা কবে ভাঙবে বলো?
বর্ণবাদের মশাল মিছিল তোমরা কেনই বা জ্বালো?
(লেখক: মাকসুদা আক্তার প্রিয়তী, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আইরিশ পাইলট, মডেল, অভিনেত্রী, লেখক ও সাবেক মিস আয়ারল্যান্ড)