আজ ১লা জুলাই ২০২০, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবের ১০০ বছরে পদার্পণের দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে কিছু বলতে গেলেই সকলের মুখে শোনা যায় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অনেকের ধারণা এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-গবেষণার মাধ্যমে কোন বিশেষ দেশি বা অন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে অর্জিত কোন উপাধি। আবার কেউ বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড এক সময় ছিল, এখন নেই। এটি নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের বাহাস।
আজ আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কখন, কে, কিভাবে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামকরণ করলেন, এর ভিত্তি বা ডকুমেন্ট বা প্রমাণ কি, এসব বিষয় একটু জানার চেষ্টা করবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয়। এটি মূলত কথিত অর্থাৎ মানুষ মুখে মুখেই এই উপাধি। লিখিতভাবে এই নামের কোনো দলিল নেই। বিভিন্ন সূত্র ও দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটে কোথাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নামের সঙ্গে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড কথাটির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।
তবে নজরুলকে বাংলার বায়রন বলা হয়। প্রাচ্যের ভেনিস ব্যাংক, দক্ষিণের গ্রেট ব্রিটেন বলা হয় নিউজিল্যান্ডকে। এ বৈশিষ্ট্যের জন্য তুলনা করা হয় বা উপমা দেওয়া হয়। তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে এর কিছু প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো কিংবা শিক্ষা পদ্ধতি ও সিলেবাসের মিলের কারণে হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো।
যে কারণেগুলোর জন্য প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয়:
প্রতিষ্ঠাকাল : অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পায় আনুমানিক ১১শ শতাব্দীর শেষ দিকে অথবা ১২শ শতাব্দীর শুরুর দিকে। অপরদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১ সালে অর্থাৎ ১৯শ শতাব্দীর শুরুতে। অক্সফোর্ডের মতো পূর্ববঙ্গের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এ অক্সফোর্ডের মতো ঢাবি এ অঞ্চলের সর্বপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলসহ শুরুর দিকের বেশকিছু স্থাপনা অক্সফোর্ডের অবকাঠামোর সঙ্গে মিলে যায়। এটাও এই নামকরণের একটি অন্যতম কারণ।
রেসিডেন্ট ও হাউজ টিউটর: অক্সফোর্ডের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রিত হয় হল কেন্দ্রীক। একজন শিক্ষার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় তিনি কোন হলের ছাত্র। এরপর তার পরিচয় তিনি হলের আবাসিক/ অনাবাসিক শিক্ষার্থী। এছাড়া শিক্ষার্থীদেরকে লেখাপড়ায় সাহায্যের জন্য উভয় বিশ্ববিদ্যালয়েই হাউস টিউটরের ব্যবস্থা রয়েছে।
শিক্ষার উচ্চমান : অক্সফোর্ডের মতো সূচনালগ্নে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিভিন্ন প্রথিতযশা বৃত্তিধারী ও বিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণ ও শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রিত হবার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে স্বীকৃতি পায়। যা এই অঞ্চলের আর কোন খুব একটা দেখা যেত না। প্রতিষ্ঠালগ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার সাথে জড়িত ছিলেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ.সি. টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, জি.এইচ. ল্যাংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, ডব্লিউ.এ.জেনকিন্স, রমেশচন্দ্র মজুমদার, স্যার এ. এফ. রাহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষের মতো ব্যক্তিরা।
উইকিপিডিয়া যা বলছে: ১৯২১ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতে অক্সব্রিজ শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণে এটি স্থাপিত হয়। সূচনালগ্নে বিভিন্ন প্রথিতযশা বৃত্তিধারী ও বিজ্ঞানীদের দ্বারা কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রিত হবার প্রেক্ষাপটে এটি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে স্বীকৃতি পায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয়?
পুর্ববর্তী নিউজ